Tuesday, July 18, 2017

Hanuman(হনুমান)

Hanuman(হনুমান)


২৮ চৈত্র, ১১ এপ্রিল

২৮ চৈত্র, ১১ এপ্রিল, মঙ্গলবার ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের পরম ভক্ত বজরঙ্গবলী হনুমানজীর জন্মদিন। ত্রেতাযুগের এমনি এক চৈত্রী পূর্ণিমায় মহাবীর হনুমানজীর জন্ম হয়। তাঁর পূত জন্মদিন উপলক্ষে ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দে উত্তরভারতে জন্ম নেয়া শ্রীতুলসীদাস গোস্বামীর লেখা হনুমান চালীসা পাঠ করার জন্যে সবার প্রতি অনুরোধ থাকলো। সকল বিঘ্ননাশ এবং কামনাপূরণ হয় এই হনুমান চালীসা পাঠে। উত্তর, মধ্য এবং পশ্চিম ভারতের হিন্দিভাষীদের মধ্যে এটা নিত্যপাঠ্য ; অন্ততপক্ষে হনুমানজীর জন্মবার মঙ্গলবারে এই পবিত্র স্তোত্রটি সবাই পাঠ করে। আমরা বাঙালীরাও কেন বা শ্রীহনুমানজীর কৃপা থেকে বঞ্চিত হবো?


শ্রীহনুমতে নমঃ
শ্রীহনুমান চালীসা
দোঁহা
শ্রী গুরু চরন সরোজ রজ, নিজ মনু মুকুর সুধারী ।
বরনউ রঘুবর বিমল জসু, জো দায়ক ফল চারি ।।
বুদ্ধিহীন তনু জানিকে, সুমিরৌ পবন -কুমার ।
বল বুদ্ধি বিদ্যা দেহু মোহি , হরহু কলেস বিকার ।।

চৌপাই
জয় হনুমান জ্ঞান গুন সাগর।
জয় কপীস তিহুঁ লোক উজাগর ।।১
রাম দূত অতুলিত বল ধামা।
অঞ্জনী-পুত্র পবনসুত নামা ।।২
মহাবীর বিক্রম বজরঙ্গী। 
কুমতি নিবার সুমতি কে সঙ্গী ।।৩
কঞ্চন বরন বিরাজ সুবেসা। 
কানন কুন্ডল কুঞ্চিত কেশা ।।৪
হাত বজ্র ঔ ধ্বজা বিরাজৈ। 
কাঁধে মূঁজ জনেঊ সাজৈ ।।৫
শঙ্কর সুবন কেশরীনন্দন। 
তেজ প্রতাপ মহা জগ বন্দন ।।৬
বিদ্যাবান গুনী অতি চাতুর। 
রাম কাজ করিবে কো আতুর ।।৭
প্রভু চরিত্র সুনিবে কো রসিয়া। 
রাম লক্ষ্মণ সীতা মন বসিয়া ।।৮
সূক্ষ্ম রূপ ধরি সিয়হিঁ দিখাবা। 
বিকট রূপ ধরি লঙ্কা জরাবা ।।৯
ভীম রূপ ধরি অসুর সঁহারে।
রামচন্দ্র কে কাজ সঁবারে ।।১০

লায় সজীবন লখন জিয়ায়ে। 
শ্রীরঘুবীর হরষি উঁর লায়ে ।। ১১
রঘুপতি কীনহী বহুত বড়াঈ।
তুম মম প্রিয় ভরত সম ভাই ।। ১২
সহস বদন তুমহরো জস গাবৈঁ
অস কহি শ্রীপতি কন্ঠ লগাবৈঁ ।।১৩
সনকাদিক ব্রহ্মাদি মুনীসা
নারদ সারদ সহিত অহীসা ।।১৪
জম কুবের দিগপাল জহাঁ তে।
কবি কোবিদ কহি সকে কহাঁ তে ।।১৫
তুম উপকার সুগ্রীবহিঁ কীনহা।
রাম মিলায় রাজপদ দীনহা ।।১৬
তুমহরো মন্ত্র বিভীষন মানা।
লঙ্কেশ্বর ভএ সব জগ জানা ।।১৭
য়ুগ সহস্র যোজন পর ভানু। 
লীল্যো তাহি মধুর ফল জানূ ।।১৮
প্রভু মুদ্রিকা মেলি মুখ মাহীঁ।
জলধি লাঘিঁ গয়ে অচরজ নাহীঁ ।।১৯
দুর্গম কাজ জগত কে জেতে।
সুগম অনুগ্রহ তুমহরে তেতে ।।২০

রাম দুয়ারে তুম রখবারে।
হোত ন আজ্ঞা বিনু পৈসারে ।। ২১
সব সুখ লহৈ তুমহারি সরনা। 
তুম রক্ষক কাহূ কো ডড় না ।। ২২
আপনা তেজ সমহারো আপৈ।
তীনৌঁ লোক হাঁক তেঁ কাঁপৈ ।। ২৩
ভূত পিশাচ নিকট নহিঁ আবৈ। 
মহাবীর জব নাম সুনাবৈ ।। ২৪
নাসৈ রোগ হরৈ সব পীড়া। 
জগত নিরন্তর হনুমত বীরা ।।২৫
সঙ্কট তেঁ হনুমান ছুড়াবৈ।
মন ক্রম বচন ধ্যান জো লাবৈ ।।২৬
সব পর রাম তপস্বী রাজা।
তিন কে কাজ সকল তুম সাজা ।।২৭
ঔর মনোরথ জো কোই লাবৈ।
সোই অমিত জীবন ফল পাবৈ ।।২৮
চারোঁ য়ুগ প্রতাপ তুমহারা।
হৈ প্রসিদ্ধ জগত উজিয়ারা ।। ২৯
সাধু সন্ত কে তুম রখবারে।
অসুর নিকন্দন রাম দুলারে ।।৩০

অষ্ট সিদ্ধি নৌ নিধি কে দাতা। 
অস বর দীন জানকী মাতা ।।৩১
রাম রসায়ন তুমহারে পাসা।
সদা রহো রঘুপতি কে দাসা ।।৩২
তুমহরে ভজন রাম কো পাবৈ। 
জনম জনম কে দুখ বিসরাবৈ ।।৩৩
অন্তকাল রঘুবর পুর জাঈ।
জঁহা জন্ম হরি-ভক্ত কহাঈ ।।৩৪
ঔর দেবতা চিত্ত ন ধরঈ।
হনুমত সেই সর্ব সুখ করঈ ।।৩৫
সঙ্কট কটে মীটে সব পীড়া। 
জো সুমিরৈ হনুমত বলবীরা ।।৩৬
জয় জয় জয় হনুমান গোসাঈঁ।
কৃপা করহু গুরু দেব কী নাঈ ।। ৩৭
জো শতবার পাঠ কর কোঈ।
ছুটহি বন্দি মহা সুখ হোঈ ।। ৩৮
জো ইয়ে পড়ে হনুমান চালীসা।
হোয় সিদ্ধি সাখী গৌরীসা ।। ৩৯
তুলসীদাস সদা হরি চেরা
কীজৈ নাথ হৃদয় মেঁ ডেড়া ।। ৪০

দোঁহা
পবনতনয় সংকট হরণ, মঙ্গলমুরতি রূপ ।
রাম লখন সীতা সহিত, হৃদয় বসহু সুর ভূপ ।।

ইতি হনুমান চালীসা

বঙ্গাব্দ

বঙ্গাব্দ


বঙ্গাব্দের উৎপত্তি নিয়ে অনেকগুলো মতের মধ্যে প্রধানমত চারটি:
  1. সম্রাট আকবর
  2. সুলতান হুসেন শাহ
  3. তিব্বতীয় শাসক স্রং-সন-গাম্পো
  4. গৌড় বঙ্গের প্রথম সার্বভৌম রাজা শশাঙ্ক
এর মধ্যে সম্রাট আকবরকে নিয়ে প্রথম মতটি অনেক শক্তিশালী। পাকিস্থান আমল থেকে বিশেষ রাজনৈতিক কারণে এই মতটিকে প্রচারণা চালানো হয়। বলা হয়ে থাকে সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের বছর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ, হিজরী ৯৬৩ সালকে বঙ্গাব্দের প্রথম বছর ধরে আমীর ফতই উল্লাহ সিরাজির প্রচেষ্টায় বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করেন। এই যুক্তি অনুসারে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের আগে কোন বঙ্গাব্দ ছিলো না। সত্যি কি তাই!

তবে কেন বাকুড়ার একটা মন্দিরে ১০২ বঙ্গাব্দের উল্লেখ আছে? এবং বৃন্দাবনচন্দ্র পুততুণ্ড রচিত "চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস" গ্রন্থে ৬০৬ বঙ্গাব্দের উল্লেখ আছে?
এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত দেয়া যায়। যারা আকবরকে বঙ্গাব্দের প্রবর্ত্তক বলেন এবং বলেন ৯৬৩ হিজরী সালকে বঙ্গাব্দে প্রতিস্থাপন করেই বঙ্গাব্দ যাত্রা শুরু করেছে ; এটা যে কত হাস্যকর এবং বালখিল্য কথা তা একটা বাচ্চা ছেলেও বুঝবে। শুধুমাত্র গায়ের জোড়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বলা হচ্ছে। যার বাস্তব ভিত্তি অনেক নড়বড়ে।

বঙ্গাব্দের উৎপত্তি নিয়ে ২ এবং ৩ নং মতটির পক্ষে বিশেষ যুক্তি নেই তাই, এ নিয়ে বিশেষ আলোচনায় যাচ্ছি না।

আমরা এখন চতুর্থ জোরালো মত নিয়ে আলোচনা করে দেখবো এর পক্ষে যুক্তিসমূহ -
  • পঞ্জিকার বর্ষগণনা অনেক জটিল আমরা তাই কোন জটিল, কুটিল পথে না যেয়ে সহজভাবে দেখার চেষ্টা করবো। এখন ইংরেজি চলছে ২০১৭ সাল এবং বাংলার চলছে ১৪২৩ বঙ্গাব্দ। ইংরেজি কত খ্রিস্টাব্দ থেকে বঙ্গাব্দ শুরু হয়েছে এটা জন্যে আমাদের ২০১৭খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪২৩ বঙ্গাব্দকে বিয়োগ করলে আমরা ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দ পাই। অর্থাৎ ইংরেজি ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গাব্দের প্রবর্তন হয়।
    সেইসময় বাংলার বিভিন্ন জনপদে বিভক্ত বাংলার শাসক কে ছিলেন?
    সহজ উত্তর গৌড় বঙ্গের প্রথম সার্বভৌম রাজা তখন শশাঙ্ক। তিনি বিভিন্ন জনপদগুলোকে এক করে গৌড় সাম্রাজ্যের প্রবর্তন করেন।
    লোডস্টার, প্ল্যানেটরিয়াম সহ বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে যদি দিনটিকে আমরা বিশ্লেষণ করি তবে দেখতে পাব ১ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ তারিখটি ছিলো - ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল সোমবার।
    ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দটি ছিলো সম্ভবত গৌড় বঙ্গের প্রথম সার্বভৌম রাজা শশাঙ্কের রাজ্যাভিষেকের বছর। আর রাজা শশাঙ্ক যে কট্টরপন্থী শৈব ছিলেন, তা ইতিহাস পাঠকমাত্রই জানেন। এবং তাই শৈবপন্থী কোন রাজা অবশ্যই শৈবদের কাছে পরম পবিত্র সোমবার দিনটিকেই যে রাজ্যাভিষেক,অব্দ প্রবর্তন সহ সকল কাজেই বেছে নিবেন ; তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
(এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্যে আগ্রহীরা পড়তে পারেন সুনীলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা, "বঙ্গাব্দ প্রসঙ্গ"। )

লেখকঃ
শ্রী  কুশল বরন চক্রবর্তী 
সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । 
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ,বাংলাদেশ ।

Akshaya Tritiya

Akshaya Tritiya(অক্ষয় তৃতীয়া)



 সংক্ষেপে পবিত্র অক্ষয় তৃতীয়া সম্পর্কিত কিছু কথা।
বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিকেই অক্ষয় তৃতীয়া বলা হয় । হিন্দু শাস্ত্রানুসারে অক্ষয় তৃতীয়া অনন্য তাৎপর্যময় এবং পরম মাহাত্ম্যপূর্ণ তিথি। অক্ষয় শব্দের অর্থ হলো যার ক্ষয় নেই ; তাই এই মহাপবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পাদন করলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে।
(আগামী ২৯ এপ্রিল শানিবার অক্ষয় তৃতীয়া)

এ অক্ষয় তৃতীয়া সম্পর্কে শ্রীচৈতন্যের সমসাময়িক স্মার্তচূড়ামণি শ্রীরঘুনন্দন ভট্টাচার্য প্রণীত "তিথিতত্ত্বম্" গ্রন্থে যা বলা আছে তাই সংক্ষেপে সংস্কৃত শ্লোক থেকে বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তুলে ধরছি :
  • স্মৃতিতে বলা আছে - বৈশাখ মাসের শুক্লতৃতীয়া যদি কৃত্তিকা বা রোহিণীনক্ষত্র যুক্ত হয়, তবে তাকে অক্ষয় তৃতীয়া বলে। এ দিনে দান সহ যে যে পবিত্র কর্ম করা হয় তার সকল ফলই অক্ষয় হয়।
  • ভবিষ্যোত্তর পুরাণে বলা আছে - বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের যে তৃতীয়া তিথি, তা জগতে অক্ষয় নামে প্রসিদ্ধ, তাই দেবগণেরও প্রিয় এ তিথি। যে মনুষ্য এ দিনে জল ও অন্ন-সম্মিলিত কুম্ভ দান করে সে জ্যোতির্ময় সূর্যলোক প্রাপ্ত হয়।
  • ব্রহ্মপুরাণে বলা আছে - বৈশাখমাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়াতে যে ব্যক্তি চন্দনচর্চিত ভগবান শ্রীহরি বিগ্রহ দর্শন করে, সে ভগবানের পরমধামে গমন করে।
  • আরও বলা আছে - শ্রীভগবান বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়াতে সত্যযুগের অবতারণা করেন এবং খাদ্যশস্য হিসেবে যবের উৎপত্তি করেন। তাই এ দিনে যব দ্বারা ভগবানের পূজা করবে এবং ব্রাহ্মণ সহ সকলকে যব দান করবে এবং ভোজন করাবে। এদিনে পতিতপাবনী গঙ্গাও পৃথিবীতে অবতরণ করে। তাই এ দিনে মহাদেব, গঙ্গা,কৈলাস ও হিমালয় পর্বতাদির পূজা করবে এবং সাথে সাথে সগরকুলের ধুরন্ধর ভগীরথ রাজারও পূজা করবে। এ দিনে স্নান,দান, তপ,শ্রাদ্ধ এবং হোম ইত্যাদি যে যে মঙ্গলময় অনুষ্ঠান করবে, তা সকলই অক্ষয় ফল দান করবে।
  • স্কন্ধপুরাণে ভগবান বলছেন- বৈশাখমাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া অক্ষয়া নামে অভিহিত, সেই তৃতীয়াতে আমার শরীর শোভন ও সুগন্ধ লেপনদ্রব্য দ্বারা লিপ্ত করবে।
  • রঘুনন্দনের বলা ছাড়াও আরো অসংখ্য মাহাত্ম্যপূর্ণ এবং তাৎপর্যময় ঘটনার তিথি পবিত্র এ অক্ষয় তৃতীয়া :ভগবানশ্রীপরশুরাম অবতাররূপে আসেন এ দিনেই।
  • শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়নবেদব্যাস এ দিনেই মহাভারতের রচনা শুরু করেন।
  • দশমহাবিদ্যার অন্যতম দেবী ধুমাবতীর আবির্ভাব এ দিনেই।
  • সত্যযুগের শুরু এ দিন থেকেই।
  • ভারতের_উত্তরাঞ্চলীয় চারধামের অন্যতম কেদার বদরীনাথের মন্দির ছয়মাস বন্ধ থেকে এ দিনেই তার দ্বার খুলে দেয়া হয়। দ্বার খুললেই অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ দৈব অক্ষয়দীপের দর্শন হয় সকলের।
  • কুবেরের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন এদিনেই। কুবেরের লক্ষ্মী এবং অতুল ঐশ্বর্য লাভ হয়েছিলো বলে এদিনে তাই বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
  • পুরীধামে_জগন্নাথদেবের_রথযাত্রা উপলক্ষে রথ নির্মাণ এ দিন থেকেই শুরু হয় এবং আজ থেকেই থেকেই জগন্নাথদেবের ২১ দিনব্যাপী চন্দনযাত্রা উৎসবের সূচনা ঘটে।
  • সকল_দেবস্থানে বিশেষ করে বৈষ্ণবদেবস্থানে এ দিন থেকেই মহাধুমধামে চন্দনযাত্রা উদযাপিত হয়।
  • সাধকপুরুষ_রামচন্দ্রদেবের এ দিনে তিরোধান দিবস। তাই এ দিনে সারাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ নোয়াখালীর চৌমুহনীতে স্থিত তাঁর সমাধিবেদিতে জল দান করেন।

তাই এদিনে আমরা যদি ভালো কাজ করি, তবে আমাদের অক্ষয় পূণ্য লাভ হবে পক্ষান্তরে তামসিক খারাপ কাজের ফল হবে অক্ষয় পাপের যমযন্ত্রণা । তাই এদিন খুব সাবধানে প্রতিটি কাজ করা উচিত। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে ভুলেও যেন কোনো পাপকাজ আমাদের দ্বারা না হয়ে যায়। এ দিনে ভুলেও যেন মন্দ-কটু কথা না বেরোয় আমাদের মুখ থেকে। তাই এদিন যথাসম্ভব সাত্ত্বিকভাব থাকা প্রয়োজন। আর এদিন পূজা,জপ,ধ্যান,দান,অপরের মনে আনন্দ দেয়ার মত কাজ করা উচিত। এদিনটা ভালোভাবে কাটানোর অর্থ সাধনজগতের পথে অনেকটা অনেকটা এগিয়ে ঈশ্বরের নৈকট্যলাভ । তাই পবিত্র অক্ষয়তৃতীয়ায় শ্রীভগবানের অপার করুণা আমাদের সবার পরমসঙ্গী হোক, এ শুভকামনা রেখে আমার এই লেখাটি শেষ করলাম।
লেখকঃ
শ্রী  কুশল বরন চক্রবর্তী 
সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । 
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ,বাংলাদেশ ।

Mother's Day

Mother's Day(মা দিবস)

মা সারদাদেবী
ইউরোপ-আমেরিকার ভাবধারানুসারী হয়ে একদিনের জন্যে মা দিবস পালন না করে ৩৬৫ দিনই মা দিবস পালন করা উচিৎ। কারণ আমাদের শাস্ত্রে বলা আছে-
উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য আচার্যাণাং শতং পিতা।

সহস্রং তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে।।
(মনুসংহিতা : ২.১৪৫)

দশজন উপাধ্যায় (যিনি জাগতিক শিক্ষা দেন) থেকে একজন আচার্য (যিনি বিনে পয়সায় বৈদিক জ্ঞান দান করেন) শ্রেষ্ঠ ; একশজন আচার্য থেকে একজন জন্মদাতা পিতা শ্রেষ্ঠ ; এবং জন্মদাত্রী মাতা পিতা থেকেও সহস্র সহস্রগুণে শ্রেষ্ঠ।
এ কারণেই বেদে বৈদিক শিক্ষা সমাপনান্তে বৈদিক সমাবর্তন ভাষণে বলা আছে-
মাতৃদেবো ভব। পিতৃদেবো ভব।
ইউরোপীয় মে মাসে খ্রিস্টীয় পবিত্র দ্বিতীয় রবিবারে মা দিবস পালন না করে আমাদের উচিৎ হবে মা সারদাদেবী অথবা তাঁর মত মাতৃরূপা কোন এদেশীয় ভারতবর্ষীয় মহামানবীর জন্মদিনকে মা দিবস বলে পালন করা। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা শুধু মাত্র একদিনের বিষয় নয়; প্রতিদিনের প্রতিক্ষণের বিষয়।
বহু তর্ক-বিতর্কের মধ্যেও ঘটা করে মা দিবস পালিত হচ্ছে। চলুন জেনে নিই আজকের প্রথম আলোতে প্রকাশিত সায়ফুল সামিনের লেখা মা দিবসের ইতিবৃত্ত নিয়ে একটি লেখা 'মা দিবস এলো যেভাবে' নামক লেখাটি-
" আধুনিক মা দিবসের প্রচলন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দিবসটির প্রবক্তা আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস। তাঁর মা অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ছিলেন একজন শান্তিবাদী সমাজকর্মী। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯০৫ সালে অ্যান মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন। সব মাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি দিবস প্রচলনের লক্ষ্যে সচেষ্ট হন তিনি।
১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তাঁর মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে তাতে দমে যাননি আনা। তিনি তাঁর চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে।
অবশেষে আনার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটি সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।
ক্রমেই দিবসটি ঘিরে বাণিজ্য শুরু হয়। এতে দিবসটির মূল চেতনা লঙ্ঘিত হয়। মর্মাহত হন আনা। দিবসটির বাণিজ্যিকীকরণের তীব্র বিরোধিতা করেন তিনি। "
ইউরোপ- আমেরিকায় অনেকেই আছে যারা সারাবছর মায়ের কোন খোঁজখবর নেয় না বা নিতে সময় পায় না। তারাই বছরে একদিন এই মা দিবসে কেক, মিস্টি এবং বিভিন্ন রকমের গিফট নিয়ে মায়ের সাথে সময় কাটায়। তাই তাদের জন্যে এই দিনটি পালনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে ইউরোপ -আমেরিকাবাসীদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ, ওই একই কারণে ভারতবর্ষের জন্যে এ দিনটি গুরুত্বহীন। আমরা ৩৬৫ দিনই মায়ের কোলে উঠে মায়ের ভালবাসায় আচ্ছন্ন থাকতে চাই। সাধক কবি রামপ্রসাদ সেনের ভাষায় বলতে হয়-
যে দেখেছে মায়ের দোল, সে পেয়েছে মায়ের কোল,
রামপ্রসাদের এই বোল, ঢোল মারা বাণী।
( মা শব্দটা উচ্চারণের সাথে সাথে আমার মায়ের সাথে সাথে যাঁর কথা সর্বপ্রথম আমার মনে প্রতিভাসিত হয়; তিনি হলেন মা সারদাদেবী।)
লেখকঃ
শ্রী  কুশল বরন চক্রবর্তী 
সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । 
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ,বাংলাদেশ ।

ঢাকেশ্বরী মন্দির

ঢাকেশ্বরী মন্দির

আমরা প্রায় সকলেই কম বেশি জানি বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির হল শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী মন্দির। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত। মন্দিরে রয়েছে অষ্ট ধাতুর তৈরি দশভূজা অসুরদলনী মা দুর্গার বিগ্রহ। এক চালার এই বিগ্রহে মায়ের সঙ্গে রয়েছে লক্ষী,সরস্বতী,কার্তিক এবং সিদ্ধিদাতা গনেশের শ্রীবিগ্রহ। চালচিত্রের উপরে রয়েছে ধ্যানমগ্ন দেবাদিদেব।মন্দির আরও আছে মহাদেব এবং বাসুদেবের শ্রী মূর্তি। মন্দিরের পাশে রয়েছে পুকুর ও সারিবদ্ধ চারটে মনোরম শিব মন্দির।
মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে রয়েছে নানা মুণির বিভিন্ন মত। তবে মায়ের নাম হল ঢাকেশ্বরী যার অর্থ ঢাকার ঈশ্বরী বা রক্ষাকর্তী।অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন ঢাকেশ্বরী নাম থেকেই ঢাকা নামটি এসেছে। এই মন্দির অনেক প্রাচীন।তবে মন্দির প্রতিষ্ঠায় দুজন ব্যক্তির কথা পাওয়া যায়। বল্লাল সেন ও মোঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহ।মানসিংহ এখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এ জনশ্রুতি আছে। তবে অধিকাংশ গবেষক সেন বংশের প্রবল পরাক্রমশালী রাজা বল্লাল সেন কে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে মত দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বলা হয়। কোন করনে মন্দিরের কাছে উপবনে বল্লাল সেনের মা কে বনবাস দেয়া অন্তসত্ত্বা অবস্থায় । তিনি বনে ঢাকেশ্বরী মায়ের আরাধনা করেন সেখানে বল্লাল সেনের জন্ম হয়। বনে জন্ম তাই বনলাল বা বল্লাল নাম রাখেন তার মা।

এসো ঋত-ঋদ্ধির পথে

এসো ঋত-ঋদ্ধির পথে

বর্তমানে আমাদের অনেকেরই ধারণা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সম্পূর্ণটাই বুঝি বা ব্রিটিশদের অবদান । আমরা অশিক্ষিত চাষা-ভূষা ছিলাম । তারাই আমাদের কাছে প্রথম শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছেন । আবার অনেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার করণে বলেন তুর্কিরাই প্রথম মাদ্রাসা জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষার গোড়াপত্তন করেন । তুর্কিরা মূলতঃ সাম্রাজ্যবাদের শেকড় ছড়াতে শুরু করে একাদশ শতাব্দী থেকে । অনুরূপভাবে ব্রিটিশরাও তাদের সাম্রাজ্যবাদী শেকড় ছড়াতে থাকে অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে । তাহলে আমাদের কি নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিলনা ? সবটাই কি আমরা পেয়েছি এই বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের থেকে !
এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আজ বড় প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে । এ ভূখণ্ডের আবহমান সংস্কৃতিকে যারা বুকে ধারণ করে আছে সেই হিন্দু জাতির আজ যাতনার অন্ত নেই । সীমাহীন মিথ্যাচারে আবহমান সংস্কৃতিকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেবার জন্য আছে একদল তথ্যসন্ত্রাসকারী । এদের প্রধান লক্ষ্য এ দেশের সংস্কৃতির অভিমুখকে ঘুরিয়ে দিয়ে অতীতের সাম্রাজ্যবাদীদের অপূর্ণ কর্মকে বর্তমানকালে পূর্ণ করে তোলা । সে লক্ষ্যেই চলছে তাদের ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সর্বপ্রকার কর্মকাণ্ড । এ কর্মকাণ্ডে তারা পুরোটাই প্রায় সফল । কারণ তাদের প্রচারণার ফলে হিন্দু জাতি আজ দিশেহারা । হিন্দু কিশোর, তরুণ, যুবক টেরও পাচ্ছেনা যে অজ্ঞাতসারে তারা কোন সর্বনাশা অন্ধকারময় তথ্যসন্ত্রাসের জালে জড়িয়ে যাচ্ছে ।
এ জালে জড়িয়ে পড়ার দায় আমাদেরও কম নয় । ধর্মীয় কি শিক্ষা দিচ্ছি আমাদের ছেলে মেয়েদের ? এককথায় বলতে গেলে কিছুই না । আজ পড়াশুনার পাশাপাশি নাচ, গান, কবিতা, আবৃতি, খেলাধুলা সবকিছু শেখার সময় এবং টাকা পয়সা আমাদের আছে; শুধু একরাশ কার্পণ্য ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে । এর ফল তো আমরা চারপাশেই দেখতে পাচ্ছি । কোর্টে যখন ছেলে মেয়ে ধর্মান্তরিত হয়, তখন মা বাবা কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে ফেললেও কোন লাভ তো হয়ইনা; উল্টো সেই ছেলে অথবা মেয়ের অচিন্ত্য, অস্রাব্য, অসভ্যতা পিতা মাতার সর্বসমক্ষে হজম করতে হয় । আর ধর্মীয় শিক্ষার নামে তাদের যা শিক্ষা দিচ্ছি তা হলো কতগুলো ঠাকুরমা দিদিমার গল্প । অবাস্তব, অলৌকিক পৌরাণিক উপাখ্যান এবং আশাস্ত্রীয় কিছু ব্যক্তিগত মতের কৃত্রিম কথার ফুলঝুড়ি ।
বেদ আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ । বেদের উপরেই সনাতন ধর্ম প্রতিষ্ঠিত । সেই বেদের ছিটে-ফোঁটাও কি আছে আমাদের জনজীবনে ! বৈদিক সৃষ্টি তত্ত্ব যা কি-না পুরোটাই প্রায় বিজ্ঞানসম্মত অথচ আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দেই, মধু-কৈটভের মেদ থেকেই পৃথিবীর সৃষ্টি; এ কারণেই পৃথিবীর আরেক নাম মেদিনী । পুরাণের এ তথ্যের হয়তো কোন রূপক ব্যাখ্যা আছে । কারণ পুরাণগুলোর তৈরীই হয়েছে রূপকের মাধ্যমে, গল্পের মাধ্যমে বৈদিক জ্ঞানের প্রকাশ ঘটানোর জন্য । আমরা যদি সেই রূপকগুলো ধরতেই না পারি তবে তো সমস্যা হবেই । পুরাণগুলোর অনেক কথাই ব্যঞ্জনা এবং লক্ষণা অলঙ্কারের মাধ্যমে বলা । তাকে যদি আমরা অভিধা অর্থে গ্রহন করি তবে অর্থের বিকৃতি তো ঘটবেই । অর্থাৎ অলঙ্কারের মাধ্যমে সাহিত্যে যা বলা হয়েছে তার সবটাই আভিধানিক অর্থে গ্রহণ করা যাবে না । তাই পুরাণগুলোকে গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে ।
একটা টেবিলে কিছু ভালো ফল আছে এবং গুটিকয়েক পঁচা ফল আছে । একটা শিশু ফল খাবার জন্য দৌড়ে এসে যদি সেই গুটিকয়েক পঁচা ফলের উপরই তার হাত বাড়ায়, এবং মুখে দিয়ে বুঝতে পারে ফলটি পঁচা; তবে থু দিয়ে সে শুধুমাত্র পঁচা ফলটি ফেলে দিবে তাই নয়, তার ধারনা হবে টেবিলের সব ফলই বুঝি পঁচা এবং হাজার চেষ্টা করেও শিশুটিকে বোঝানো প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে যে টেবিলে ভাল ভাল সরস ফলও আছে । তার ধারণা জন্মাবে টেবিলের সব ফলই বুঝি পঁচা । এমনটাই প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে প্রায় প্রত্যেকটা হিন্দু পরিবারে । শিশু বয়সে তাকে ঠাকুরমা দিদিমার গাল গল্পের মাধ্যমে যে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয় তার ভিৎ দিন দিন নরবরে হয়ে যায় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে । একুশ-বাইশ বছরের দিকে তার বুদ্ধি যখন পূর্ণতা পায় তখন সে ভাল মন্দ বিচার করতে পারে । তখন এ ভাল মন্দ বিচার করতে যেয়ে সে ধান এবং ধানের চিটাকে একাকার করে ফেলে এবং অজ্ঞানতার জন্য চিটার সাথে সাথে ধানকেও ঝেড়ে ফেলে দেয় । সঠিক-বেঠিক বোধটাকে সে গুলিয়ে ফেলে । পরিণামে সে হয়ে ওঠে অবিশ্বাসী । এ অবিশ্বাসের মাত্রা দিন দিন বাড়তে বাড়তেই সে হয়ে যায় ঘোরতর নাস্তিক । পরিণামে সে পরিবার, সমাজ, ধর্ম, সংস্কৃতির, মহাবৈরী হয়ে যায় । কিন্তু এর জন্য দায়ী কারা ? আমরাই । কারণ আমাদেরই দায়িত্ব ছিলো শিশুটিকে প্রকৃত বৈদিক শিক্ষা দেয়া এবং তা দিতে পারিনি বলেই আজ এ ঘটনা ঘটেই চলেছে । কিন্তু এ প্রপঞ্চকে আর কতদিন চলতে দেয়া যায় এবং অভিঘাতে আর কত পরিবার ধ্বংস হবে ?
এর উত্তর একটাই, তা হলো অনেক হয়েছে এবার মূলে ফিরুন । অর্থাৎ বেদ-বেদান্তের পথে আসুন । একটা সময় ছিল যখন আমরা পড়ালেখা জানতাম না এবং এ শাস্ত্র গ্রন্থগুলোও আমাদের হাতের কাছে ছিলো না । এগুলো ছিল হাতে লেখা পুঁথি । তখন খুব কম মানুষই পড়ালেখা জানত এবং সেই পড়ালেখা জানা মানুষের মধ্যে খুব কম লোকই সেই গ্রন্থগুলো পড়ার সুযোগ পেতো । কিন্তু আজ তো সেই সমস্যা নেই । আজ আমরা নতুন প্রজন্মের প্রায় অধিকাংশই পড়ালেখা জানি । এর সাথে আমাদের শাস্ত্রগ্রন্থ হাতেলেখা পুঁথি থেকে আজ প্রেসে ছাপা পুস্তক আকারে আমাদের কাছে এসেছে । তাহলে কিসের এতো কার্পণ্য ?
সনাতন ধর্ম সভ্যতার সবকিছুই বেদের উপর প্রতিষ্ঠিত । তাই যতদিন আমরা বেদমাতা থেকে বিচ্যুত থাকব ততদিন আমাদের বর্তমান কালের মত হতভাগা হতচ্ছারার মত দিন কাটাতে হবে । কিন্তু যখন আমরা বেদ মাতার কোলে চড়ে তার অমৃতময় স্তন্য পান করব তখনই আমাদের জাতির জীবনে এক নতুন সূর্যোদয় হবে । যার প্রত্যাশাতেই আমাদের এ মূলে ফেরার আহ্বান, এসো ঋত-ঋদ্ধির পথে । অর্থাৎ সত্য সনাতন পরমেশ্বর এবং এর সাথে জাগতিক সমৃদ্ধিময় সুশৃঙ্খল বৈদিক জীবনের পথে এসো । এখানেই পরম আনন্দ ও শান্তি নিহিত ।
লেখকঃ
শ্রী  কুশল বরন চক্রবর্তী 
সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । 
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ,বাংলাদেশ ।

হিংস্র শ্বাপদে ক্ষতবিক্ষত এই কি আমার মাতৃভূমি ?

হিংস্র শ্বাপদে ক্ষতবিক্ষত এই কি আমার মাতৃভূমি ?

আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা । ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি প্রগতশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন । এরই ধারাবাহিকতায় দেশের চরম দুর্দিনে, মাতৃভূমির টানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক স্বপ্নবাজ যুবকদের সাথে তিনিও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । স্বপ্ন দেখেন এ দেশটা হবে একটি ক্ষুধামুক্ত অসাম্প্রয়িক রাষ্ট্র, স্থান করে নিবে উন্নত দেশের পঙক্তিতে । থাকবে না কোন হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ । মানুষ মর্যাদা পাবে মানুষ হিসাবে । ৭১ এর টগবগে সেই তরুনের বয়স আজ ষাটের কোঠা থেকে সত্তুরের কোটায় এগিয়ে চলছে । বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে বিশ্বাসের ক্ষয়িষ্ণুতা । বিশ্বাসের চন্দ্রে আজ যেন গ্রহণ লেগেছে । দুষ্ট রাহুর করালগ্রাসের থেকে কোনমতে টিকে আছে সরু একফালি চাঁদ । তাও বুঝি নিভু নিভু করছে ! নিভে গেলেই সব শেষ; অন্ধকার ।